সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

দুই আদর্শ, দুই জাতি

খুৎবায়ে মাসনুনার পর।
দুই আদর্শ-দুই জাতি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষাযার সারকথা হচ্ছেপৃথিবীতে মুসলিমগণ এক সম্প্রদায়ের আর কাফিররা আলাদা সম্প্রদায়ের।
কুরআন কারীমের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা-
 هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَمِنْكُمْ مُؤْمِنٌ  তিনিই (আল্লাহ)যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। (যার দাবি এই ছিল যেসকলেই তাঁর প্রতি ঈমান রাখবেকিন্তু) এরপর তোমাদের কিছু লোক কাফির হল আর কিছু লোক মুমিন। -সূরা তাগাবুন ৬৪ : ২
এ আয়াতে فَمِنْكُمْ শব্দবন্ধের ف শব্দটির অর্থ,এরপরঅতপর। এ থেকে জানা যায়মানব-সৃষ্টির সূচনা-কালে কেউ কাফির ছিল না। কাফির-মুমিনের ভাগ পরে হয়েছে। আর তা হয়েছে কিছু লোকের কাফির হওয়ার কারণে।
একটি হাদীসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ-
كل مولود يولد على الفطرة، فأبواه يهودانه أو ينصرانه أو يمجسانه
প্রত্যেক শিশু শুদ্ধ স্বভাব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে, (যার দাবি ঈমানদার হওয়া) এরপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদী বানায় বা নাসরানী বানায় বা অগ্নিপুজক বানায়। -সহীহ বুখারীহাদীস ১৩৫৯সহীহ মুসলিমহাদীস ২৬৫৮

সারা পৃথিবীর মুসলিম এক মিল্লাতের,আর কাফির অন্য মিল্লাতের
তো সূরায়ে তাগাবুনের উপরোক্ত আয়াতে সমগ্র মানব-জাতিকে দুই দলে ভাগ করা হয়েছে : কাফির ও মুমিন। আর এই বিভক্তির কারণও নির্দেশ করা হয়েছে। আর তা এই যেআদম আ.-এর সন্তানেরাযারা ছিল এক পরিবারের এবং যে পরিবারের সদস্য ছিল গোটা পৃথিবীর সমগ্র মানব,ঐ পরিবার ভেঙ্গে শতধাবিভক্ত হওয়ার অশুভ কারণটি হচ্ছেকুফর। যারা কাফির হয়েছে তারাই এ মুমিন পরিবারের বন্ধন ছিন্ন করে আলাদা হয়েছে। আর যারা মুমিন থেকেছে তারা ঐ আদি পরিবারের ঐক্য অটুট রেখেছে। এ কারণে মুমিন মুসলমান সে যে দেশেরই হোকযে ভাষাতেই কথা বলুকযে বর্ণ বা গোত্রেরই পরিচয় বহন করুককুরআন হাকীম সকলকে এক অভিন্ন পরিবার গণ্য করেছে।
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। -সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১০
অন্যদিকে কিয়ামত-তক ইসলামের আইনমুসলিম ও কাফির পরস্পর যদি বাপ-বেটা বা আপন ভাইও হয় তবুও একে অপরের ওয়ারিছ হবে না।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ-
لا يرث المسلم الكافر ولا يرث الكافر المسلم
মুসলিম কাফিরের ওয়ারিছ হবে নাকাফিরও মুসলিমের ওয়ারিছ হবে না। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৪০১৮
لا يتوارث أهل ملتين شتى
দুই আলাদা মিল্লাতের (ধর্মের) লোক একে অন্যের ওয়ারিছ হবে না। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ২৯১১
এভাবে কুরআন ও সুন্নাহ পৃথিবীর সকল মানুষকে দুই আলাদা সম্প্রদায়ে ভাগ করে ফায়সালা করে দিয়েছে যেসকল মুসলিম এক সম্প্রদায়ের আর কাফিররা আলাদা সম্প্রদায়ের।
তবে এর অর্থ এটাও নয় যেসকল অমুসলিমের সাথে সর্বদা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করবে এবং তাদের কোনো অধিকারই স্বীকার করা হবে না। কুরআন-সুন্নাহয় অমুসলিমদের সাথে আচরণের যে নীতি ও বিধান দেওয়া হয়েছে তাতে সদাচার ও কল্যাণকামিতাইনসাফ ও ন্যায়বিচার এবং সৌজন্য ও উদারতার নির্দেশনাও গুরুত্বের সাথে রয়েছে এবং এগুলোর সীমা-সরহদও চিহ্নিত ও নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।
অমুসলিমদের সাথে সম্পর্কের নীতি ও সীমা
এ বিষয়ে ইসলামের নীতি ও নির্দেশনার এক সংক্ষিপ্ত সারণি নিম্নরূপ:
ক. অমুসলিমদের সাথেও ইনসাফ করা ফরয
ইসলাম কাফিরদের সাথেও ইনসাফ রক্ষার আদেশ করেছে। সর্বাবস্থায় এ আমাদের পবিত্র কর্তব্য। এমনকি ওরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত হলেও। ইসলামে তো পশু-পাখীর সাথেও ইনসাফ রক্ষা করা ওয়াজিব। যেমন ভারবাহী প্রাণীর উপরও সামর্থ্যরে অধিক বোঝা না চাপানোএদের খাদ্য ও বিশ্রামের  উপযুক্ত ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
কুরআন হাকীমের ইরশাদ-
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآَنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ 
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে ন্যায়ের সাক্ষ্যদানে দাঁড়াতে থাক। কোনো জাতির দুশমনি যেন তোমাদের ইনসাফ-ত্যাগে প্ররোচিত না করে। ইনসাফ কর- এ-ই তাকওয়ার নিকটতর। আর আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবগত। -সূরা মাইদা ৫ : ৮
খ. সন্ধি করাও জায়েয
ইসলাম ও মুসলমানের জন্য কল্যাণকর ও তাদের স্বার্থের অনুকূল মনে হলে ওদের সাথে (যুদ্ধ-বিরতির) সন্ধি করারও অনুমতি আছে।
وَإِنْ جَنَحُوا لِلسّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
আর যদি ওরা (কাফিররা) সন্ধির দিকে ঝোঁকে তাহলে (আপনাকেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে যে,উপযোগী মনে হলে) আপনিও সেদিকে ঝুঁকুন। আর আল্লাহর উপর ভরসা করুন। তিনিই তো (ঐ সত্তা যিনি) সব শোনেনসব জানেন। -সূরা আনফাল ৮ : ৬১

দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার চুক্তিও একটা পর্যায় পর্যন্ত জায়েয
কিছু সর্তসাপেক্ষে ওদের সাথে একটা পর্যায় পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার চুক্তিও করা যায়। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন :জাওয়াহিরুল ফিকহ মুফতী মুহাম্মাদ শফী২/২০৪-২১৭)
ব্যবসা-বাণিজ্যেরও অবকাশ আছে
প্রয়োজন ও উপযোগিতা অনুসারে ওদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও অনুমতি আছে। তবে বিনা প্রয়োজনে মুসলমানদের বাদ দিয়ে অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করবে না। -জাওয়াহিরুল ফিকহ ১৮৩-১৮৬১৮৮-১৯০
আমাদের দেশের অমুসলিমদের হক রক্ষা আমাদের কর্তব্য
যে সকল অমুসলিম আমাদের দেশে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে (যেমন ভিসা ইত্যাদি নিয়ে আসে) কিংবা যারা এ দেশের অধিবাসী বা এ দেশের আইন-কানুন মেনে চলে ওদের জান-মাল রক্ষা করা এবং ওদের উপাসনায় বাধার সৃষ্টি না করাও আমাদের কর্তব্য।
হযরত সাফওয়ান ইবনে সুলাইম কয়েকজন সাহাবীর পুত্রদের থেকেআর তাঁরা তাদের বাবাদের সূত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীস বর্ণনা করেছেন,
ألا من ظلم معاهدا، أو انتقصه، أو كلفه فوق طاقته، أو أخذ منه شيئا بغير طيب نفس فأنا حجيجه يوم القيامة
সাবধান! যে ব্যক্তি কোনো মুআহিদের উপর (অর্থাৎ যে কাফির ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাস করে বা বাইরে থেকে ভিসা নিয়ে আসে তার উপর) যুলুম করবে অথবা তার প্রাপ্য যথাযথভাবে পরিশোধ না করবে কিংবা তার উপর সাধ্যাতীত ভার আরোপ করবে বা তার কোনো কিছু তার সন্তুষ্টি ছাড়া নিয়ে নিবে তো কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে (আল্লাহর আদালতে) মীমাংসাকারী সাক্ষ্য দিব। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ৩০৫২
إن الله تعالى لم يحل لكم أن تدخلوا بيوت أهل الكتاب إلا بإذن، ولا ضرب نسائهم ولا أكل ثمارهم
আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ অনুমতি দেননি যেতোমরা আহলে কিতাবের ঘরে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবেতাদের নারীদের প্রহার করবে ও তাদের ফল (বিনা অনুমতিতে) খেয়ে ফেলবে। -আবু দাউদকিতাবুল ইমারাহাদীস ৩০৫০

ওদের প্রতি অনুগ্রহ করা কাম্য
যেসকল অমুসলিম আমাদের সাথে যুদ্ধরত নয় বা আমাদের ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় লিপ্ত নয় এবং আমাদের দ্বীনী লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধকও নয় তাদের সাথে উদারতা ও কল্যাণকামিতার এবং উপকার ও সহানুভতি প্রকাশেরও অনুমতি আছেশুধু অনুমতিই নয়কুরআন ও সুন্নাহয় এর তাকীদও করা হয়েছে।
لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
অর্থাৎআল্লাহ তোমাদের ঐ সকল লোকের সাথে সদাচার ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না,যারা দ্বীনের বিষয়ে তোমাদের সাথে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কার করেনি। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালবাসেন। -সূরা মুমতাহিনা ৬০ : ৮
সহীহ বুখারীর বর্ণনায় আছে হযরত আসমা রা.-এর মা কুফরের হালতে মক্কা মুকাররমা থেকে মদীনা তাইয়েবায় এসেছিলেন। (মুসনাদে আহমাদের রেওয়ায়েত আছে যেএটা ঐ সময়ের ঘটনা যখন মক্কার কাফিরদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়ে গিয়েছিল) তো আসমা রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেনআমার মা আমার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছেন। তিনি তো কাফির। আমি তার সাথে কেমন আচরণ করবনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনআপন মায়ের সাথেছিলা রেহমী করঅর্থাৎ সুন্দর ব্যবহার কর।
এ প্রসঙ্গে সূরা মুমতাহিনার আয়াতগুলো নাযিল হয়যাতে এ ধরনের অন্যান্য অমুসলিমের সাথেও সদাচার ও অনুগ্রহের আদেশ করা হয়েছে। -তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৮/৪০৫
ফকীহগণ বর্ণনা করেছেনকোনো কাফির অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার খোঁজ-খবর নেওয়া জায়েয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এক ইহুদী প্রতিবেশীকে দেখতে গিয়েছিলেনযে অসুস্থ ছিল। -হিদায়া ও রদ্দুল মুহতার খ. ৫ পৃ. ৩৪১

বন্ধুত্ব জায়েয নয়
এই সব কিছুর সাথে নিজের দ্বীন ও মিল্লাতের হেফাযত এবং ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য রক্ষার স্বার্থে ইসলাম আমাদের এ নির্দেশও দিয়েছে যেকোনো প্রকারের কাফিরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। এমন মেলামেশা ও সম্পর্ক-সম্বন্ধেরও অনুমতি নেইযার মাধ্যমে প্রীতি ও ভালবাসার প্রকাশ ঘটে। কারণ মুমিন-মুসলমান যে কিনা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসার দাবিদারসে কীভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দুশমনদের বন্ধু বানাবেএ পর্যায়ের সম্পর্ককে কুরআন হাকীম অকাট্যভাবে হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
 হে ঈমানদারগণ! ইয়াহুদী ও নাসারাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। ওরা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের যে ওদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তো ওদেরই। নিশ্চয়ই আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। -সূরা মায়িদা ৫ : ৫১
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছেযারা তোমাদের দ্বীনকে ক্রীড়া-কৌতুকের বস্তু বানিয়েছেওদেরকে এবং (অন্যান্য) কাফিরদেরকে বন্ধু বানিয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর যদি তোমরা মুমিন হও। -সূরা মায়িদা ৫ : ৫৭
সূরা মুমতাহিনার শুরুই হয়েছে এ আদেশের মাধ্যমে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ
হে ঈমানদারেরা! আমার দুশমন ও তোমাদের দুশমনকে বন্ধু বানাবে না। -সূরা মুমতাহিনা ৬০ : ১

অমুসলিমকে একান্ত লোক বানানো
কুরআন মাজীদের ইরশাদ-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا
হে ঈমানদারেরা! তোমাদের পরকে একান্ত লোক বানাবে না। ওরা তোমাদের অনিষ্ট সাধনে কসুর করে না। ...- সূরা আলে ইমরান ৩ : ১১৮

সামঞ্জস্য গ্রহণ
বেশ-ভষা ও জীবন যাপনের রীতি-নীতিতে ওদের এমন সামঞ্জস্য গ্রহণ করাও নিষেধযার দ্বারা মুসলিম স্বাতন্ত্র্য ও স্বকীয়তা বিপন্ন হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ-
من تشبه بقوم فهو منهم
কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য যে গ্রহণ করে সে তাদেরই  একজন। -সুনানে আবু দাউদহাদীস ৪০৩১

মাগফিরাতের দুআ
যে কাফির কুফরির হালতে মারা যায় তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করাও কুরআন হাকীমে নিষেধ।
مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَنْ يَسْتَغْفِرُوا لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَى
অর্থাৎনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও (অন্যান্য) মুমিনদের জন্য জায়েয নয়,মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করাওদের জাহান্নামী হওয়া স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর (কুফরের হালতে মারা যাওয়ার কারণে) যদিও ওরা আত্মীয় হয়। -সূরা তাওবা ৯ : ১১৩
তবে হ্যাঁজীবিত কাফিরদের জন্য হেদায়েত ও সংশোধনের দুআ করা জায়েয। উহুদ যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার মুশরিকদের জন্য দুআ করেছিলেন-
اللهم اهد قومي فإنهم لا يعلمون
পরওয়ারদেগার! আমার কওমকে হেদায়েত দিন। কারণ ওরা (সত্য) জানে না। (শুআবুল ইমান বায়হাকীহাদীস ১৩৭৫)

আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
 যেসকল কাফির মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত বা তাদের ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টায় লিপ্ত বা ইসলামের উন্নতি ও প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধক তাদের সাথে আমাদেরকে জিহাদের আদেশ করা হয়েছে। এমন কাফিরদের সম্পর্কে কুরআন হাকীমের নির্দেশআমরা যেন ওদের ব্যাপারে ইবরাহীম আ. ও তাঁর সঙ্গীদের আদর্শ অনুসরণ করিযারা এই প্রকারের স্বদেশবাসী ও স্বগোত্রীয় কাফিরদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন-
إِنَّا بُرَآَءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যা কিছুর উপাসনা কর তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের অস্বীকার করি। আর যে পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনছ ঐ পর্যন্ত তোমাদের ও আমাদের মাঝে থাকবে খোলাখুলি শত্রুতা ও বিদ্বেষ। -সূরা মুমতাহিনা ৬০ : ৪
সারকথা এই যেকুরআন ও সুন্নাহ পৃথিবীর মানুষকেমুমিন ও কাফির এ দুই শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করে এদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও আচরণ এবং যুদ্ধ ও সন্ধির সীমারেখাও ন্যায় ও ভারসাম্যের সাথে নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ সীমারেখা লঙ্ঘন করার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি।
নবী-যুগে ও খিলাফতে রাশিদার আমলে কাফিরদের সাথে যত জিহাদ হয়েছে তা উপরোক্ত দ্বিজাতি-দর্শনের ভিত্তিতেই হয়েছে। সকল ক্রুসেডও এরই ভিত্তিতে সংঘটিত হয়েছে। কাফির কওমের সাথে পূর্ববর্তী নবীগণের যত লড়াই হয়েছে সেগুলোর পিছনে এ দর্শনই কার্যকর ছিল।

দ্বিজাতি-তত্ত্ব ও বৃহত্তর ঐক্য
এখানে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে যেবিভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন মানব-জাতিকে নানা ভাগে বিভক্ত করেছেকখনো বর্ণের ভিত্তিতেযেমন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রিটেনে। ওখানে যে অধিকার একটি কুকুরের আছে তা একজনকালোর নেই।
কখনো বংশ ও গোত্রের ভিত্তিতেযেমনটা ইসলাম-পূর্ব যুগে আরব-কবীলাগুলোর অবস্থা ছিল এবং যে কারণে আজও পৃথিবীর বিভিন্ন গোত্রশাসিত অঞ্চলে এক গোত্র অন্য গোত্রের রক্তপিপাসু।
আর কোথাও মানব-জাতিকে শতধা বিভক্ত করা হয়েছে ভাষা ও ভখণ্ডের ভিত্তিতে। ফলে ভাষা ও ভখণ্ড ভিত্তিক জাতীয়তার কারণে এক ভাই আরেক ভাইয়ের গলা কাটছে।
এই সব কিছুর বিপরীতে ইসলাম মানবজাতিকে শ্রেণীবদ্ধ করেছে ঈমান ও কুফরের ভিত্তিতে। চিন্তা করলে দেখা যাবেএটিই একমাত্র শ্রেণী বিভাগযাতে একই সাথে রয়েছে মানবজাতির বৃহত্তর ঐক্যের এক বিস্তৃত দিগন্ত এবং অতি গভীর প্রভাবক বার্তা। কারণ,মুমিন ও কাফিরএ দুই মিল্লাতের বুনিয়াদ এমন দুইটি বিষয়যা প্রত্যেক মানবের ইচ্ছা ও সাধ্যের ভিতরে। ঈমানও মানুষের অনায়াসসাধ্যকুফরও। কেউ এদুই মিল্লাত ও ধর্মাদর্শের কোনো একটি ত্যাগ করে অন্যটিতে শামিল হতে চাইলে খুব সহজেই তা সম্ভব। নিজের আকাইদ পরিবর্তন করে সে যে কোনো ধর্মাদর্শে শামিল হয়ে যেতে পারে। শেষ যামানায় যখন ঈসা আ. অবতরণ করবেন তখন,কুরআন-সুন্নাহর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেঐ যুগ আবার ফিরে আসবে যখন পৃথিবীর সব মানুষ ঈমান এনে এক মিল্লাতের হয়ে যাবে এবং কুফরের কারণে বিভক্ত হয়ে পড়া মানব-পরিবারের এ অশুভ বিভক্তি দূর হয়ে যাবে। -তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন খ. ২ পৃ. ২০৩-২০৫
آملیں گے سینہ چاکان چمن سے سینہ چاک + بزم گل کی ہم نفس باد صبا ہو جائيگی
پھر دلوں کو ياد آجائيگا پيغام سجود +   پھر جبيں خاک حرم سے آشنا ہو جائیگی
ভাঙ্গা বুকগুলোতে আসবে ফিরে ভাঙ্গাবুক/আর গুলমাহফিলে-পুবালী বায়ুতে হবে কানাকানি/ তখনই পড়বে মনে সিজদার পয়গাম আর /ললাটে-হরম-মৃত্তিকায় হবে জানাজানি।

ভাষাভূখণ্ড ও গোত্রীয় সাম্প্রদায়িকতা
পক্ষান্তরে বর্ণ ও বংশভাষা ও ভখণ্ড কোনোটাই মানুষের ইচ্ছা-ইখতিয়ারে নেই। কেউ কি আপন বংশ-বর্ণ বদলাতে পারেভাষা ও ভখণ্ড যদিও বা বদলানো যায়কিন্তু ভাষা-ভখণ্ড ভিত্তিক জাতি-গোষ্ঠিগুলো সাধারণত অন্যদেরকেওদের ভাষায় কথা বললেওঐ ভখণ্ডের অধিবাসী হলেওনিজেদের মধ্যে গ্রহণ করে নিতে প্রস্তুত হয় না। তো এ সকল স্বভাব-বিরুদ্ধ বিভেদ-বিভক্তির পর মানব-পরিবারের বৃহত্তর ঐক্য ও স্থায়ী বৈশ্বিক নিরাপত্তার কোনো সম্ভাবনাই আর অবশিষ্ট থাকে না। বরং ভখণ্ডগত জাতীয়তার ভিত্তিতে যে গোত্রভেদসে হিসেবে তো মানব-পরিবারকে প্রথমেদেশের হিসাবে বিভক্ত হতে হয়েছে। এরপরপ্রদেশের হিসাবে। আর এখন তো শহর ও মহল্লার হিসাবেও বিভক্ত হওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে যেতে হচ্ছে।
মানবতাকে এই চরম ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষার জন্য কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছেগোটা পৃথিবীর গোত্র-বিভাগ শুধু হতে পারে ঈমান ও কুফরের ভিত্তিতে। ভাষা ও বর্ণবংশ ও পরিবার এবং দেশ ও ভখণ্ডের কোনোটিই এমন কিছু নয় যার ভিত্তিতে মানব-পরিবারের গোত্র-বিভাগ হতে পারে।
এক বাবার সন্তানেরা বিভিন্ন দেশের অধিবাসী হওয়ার কারণে বা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার কারণে বা বিভিন্ন বর্ণের হওয়ার কারণে আলাদা গোত্র ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে না। ভাষা,বর্ণ ও ভখণ্ডের বৈচিত্র সত্তে¡ও এরা পরস্পর ভাই-ই থাকে। এদেরকে আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ের সাব্যস্ত করা জ্ঞান-বুদ্ধির কথা হতে পারে না।
তবে হ্যাঁকুফর হচ্ছে ঐ জঘন্যতম মতভেদ এবং আপন খালিক ও মালিকরব ও পরওয়ারদেগারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিদ্রোহযা মানব-পরিবারকে আলাদা আলাদা মিল্লাত ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে দিয়েছে।

মুসলিম-পরিবার
ভাষা ও বর্ণ এবং গোত্র-বংশের বৈচিত্রকে কুরআন হাকীম আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের এক নিদর্শন এবং নানা উপকারিতার কারণে একটি নেয়ামত সাব্যস্ত করেছে বটে (দ্র. সূরা রূম ৩০: ২২সূরা হুজুরাত ৪৯: ১৩) কিন্তু এর ভিত্তিতে মানব-পরিবারকে দল-উপদলে বিভক্ত হওয়ার অনুমতি দেয়নি। ইসলাম-পূর্ব জাহেলী যুগে বংশ-গোত্রকে দলবদ্ধতার ভিত্তি বানানো হয়েছিল,ইসলাম এই জাহেলী মূর্তির বিনাশ সাধন করেছে।
মক্কার কাফিররা ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বগোত্রীয়স্বদেশবাসী এবং অভিন্ন ভাষাভাষী। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও তাঁর উৎসর্গিতপ্রাণ সাহাবীগণ ঈমান ও কুফরের পার্থক্যের কারণেই তাদের শত্রু হয়েছেন। পূর্ব-পুরুষের ভিটেমাটি থেকে হিজরত করেছেন এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও বারবার জিহাদের ময়দানে উপনীত হয়েছেন। তিনি এক আলাদা ভ্রাতৃ-সমাজের গোড়াপত্তন করেছেন  যার নাম মুসলিম ভ্রাতৃসমাজ এবং এর মাধ্যমে মদীনার আনসারহাবশীরুমীফারেসী (ইরানী)  প্রভৃতি নানা দেশের মুসলিমদের ভাই বানিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন। যে গোত্র ও যে অঞ্চলের লোক ইসলাম কবুল করেছেতারা এ ভ্রাতৃ-সমাজে শামিল হয়েছে। ইসলাম তাদের এ সবকই দিয়েছিল যে,
بتان رنگ و بوکوتوڑ کر ملت میں گم ہوجا +نا تورانی ر  ہے باقی نہ ايرانی نہ افغاني
বর্ণ-গন্ধের ঐদেবতা ভেঙ্গে মিল্লাতে লীন হও / না তুরানী অভিমান থাকুকনা ইরানীনা আফগানী।

এ তো পূঁতিগন্ধময়
এক সফরে দুই সাহাবীর মাঝে ঝগড়া হল। একজন ছিলেন মুহাজিরঅন্যজন আনসারী। মুহাজির সাহাবী আনসারী সাহাবীর পশ্চাদ্বেশে আঘাত করেছিলেন। তো আনসারী সাহাবী সাহায্যের জন্য আনসারীদের ডাক দিলেনيا للأنصارহে আনসার সম্প্রদায়! এদিকে মুহাজিরও ডাক দিলেন يا للمهاجرينহে মুহাজির সম্প্রদায়! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ডাক শুনে বললেনما بال دعوى الجاهلية এ জাহেলিয়াতের ডাক কেন?! লোকেরা ঘটনা জানানোর পর বললেনدعوها فإنها منتنة এ সব (সাম্প্রদায়িক ও দলবাজির শব্দ-বাক্য) ছাড়কারণ তা (কুফর ও জাহিলিয়াতের দুর্গন্ধে) পূঁতিগন্ধময়! -জামে তিরমিযীহাদীস ৩৩১৫
এ-ই সেই ইসলামী উখুওয়াতঈমানী ভ্রাতৃত্ব যা দেখতে দেখতে সাদা-কালো ও আমীর-গরিবের ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছিল এবং পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণের অসংখ্য মানুষকে এক মেল-বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল। আর মুসলিম জাতি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তিতে পরিণত হয়েছিল।

পুরনো ফাঁদনতুন শিকার
এই শক্তির মোকাবিলায় যখন পৃথিবীর অপরাপর জাতি অক্ষম ও পর্যুদস্ত হয়ে পড়ল তখন তারা ঐসকল মূর্তি পুনর্জীবিত করলযেগুলোকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুর্ণ-বিচুর্ণ করে ফেলে ছিলেন। মুসলমানদের সুবিশাল মিল্লাতে ওয়াহিদাকে  বর্ণে-গোত্রেভাষা ও ভখণ্ডে বিভক্ত করে পরস্পরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত করল। এই অন্তর্ঘাতের কারণেই স্পেন (উন্দুলুস) থেকে মুসলমানদের প্রায় হাজার বছরের মুসলিমশাসনের হৃদয়বিদারক পরিসমাপ্তি ঘটল। তুর্কির উছমানী খেলাফত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল এবং পাকিস্তানও দুই টুকরা হয়ে গেল।
আরব দেশগুলো তোআরব জাতীয়তাবাদের মোহনীয় জাল থেকে এক তিক্ত ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পর খানিকটা মুক্ত হতে পেরেছে কিন্তু পাকিস্তানে।
বিশেষত সিন্ধে ভাষা ও ভখণ্ডের নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যার পদপ্রান্তে বলি হচ্ছে মুসলিম-ঐক্য । এ সাম্প্রদায়িকতা এমনই অন্ধ করে দিয়েছে যেপূর্ব পাকিস্তানের মতো এখানেও ভাই ভাইকে জবাই করতে আরম্ভ করেছে। অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের খুৎবায় কী দরদের সাথেই না বলেছিলেন-
لا ترجعوا بعدي كفارا يضرب بعضكم رقاب بعض
আমার পরে তোমরা কুফরীতে ফিরে যেও না যেএকে অপরের গলা কাটতে থাক। -সহীহ বুখারী,হাদীস ১২১
পরিহাসের বিষয় এই যেপ্রত্যেকভাষা-সম্প্রদায় নিজেদের মৃতদেরশহীদ নামে অভিহিত করে! অথচ রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজাতীয় লড়াইয়ে মৃত্যুবরণকারীদের সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন-
إذا التقى المسلمان بسيفيهما فقتل أحدهما صاحبه فالقاتل والمقتول في النار
যখন দুই মুসলমান নিজ নিজ তরবারী নিয়ে যুদ্ধে নামে এবং একজন অপরজনকে হত্যা করে তো নিহত ও হত্যাকারী দুজনই জাহান্নামী হয়। (কারণ নিহতেরও সংকল্প ছিল হত্যা করার।) -সুনানে নাসায়ীহাদীস ৪১২৪
এখন যে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতার মোহন বাঁশি বাজানো হচ্ছেসে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী প্রত্যেক মুসলিমের কর্ণে (ও হৃদয়ে) পোঁছে যাওয়া উচিত। -
ليس منا من دعا إلى عصبية... ليس منا من مات على عصبية
সে আমাদের নয় যেআসাবিয়্যাতের দিকে ডাকে।... সে-ও আমাদের নয়যার মৃত্যু আসাবিয়্যাতের উপর হয়। (সুনানে আবু দাউদহাদীস ৫১২১)

আমাদের দুর্বলতা
এই লজ্জাজনক গৃহবিবাদের পশ্চাতে শত্রুর ইন্ধন ও চক্রান্ত যেমন সত্য তেমনি এ-ও মিথ্যা নয় যে,বাইরের কোনো চক্রান্ত ঐ পর্যন্ত সফল হয় নাযে পর্যন্ত আমাদের কিছু দুর্বলতা ওদের হস্তগত না হয়যার দ্বারা ওরা ওদের চক্রান্তের জাল বুনে যেতে পারে। এই বাস্তবতা কে অস্বীকার করতে পারেন যেআমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে যুলুম ও অবিচারবর্তমান পুঁজিবাদী ও সামন্তবাদী ব্যবস্থায় যার বাজার রমরমাএবং যা এই নিপীড়নমূলক ব্যবস্থার বেদ্বীনী পরিবেশ সর্বত্র ছড়িয়ে রেখেছে। নতুন প্রজন্ম এই পরিস্থিতিতে নিরুপায়। ওদের নিরুপায় অবস্থাকে পুঁজি করে বাইরের এজেন্সিগুলো এদের মাঝে ভাষা ও প্রদেশ ভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিয়েছে। শুধু ইসলামের নাম নিয়ে নয়ইসলামের ন্যায় ও সাম্য ভিত্তিক সমাজ-ব্যবস্থা বাস্তবে কার্যকর করে যদি এই অনাচার ও অবিচারের পরিসমাপ্তি ঘটানো যায় তাহলে -কিছু বিশ্বাসঘাতক গাদ্দার এরপরও হয়তো বাকি থাকবে কিন্তু-ঐ সরলপ্রাণ মুসলমানদের গোমরাহ করার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবেযারা না দেশের দুশমননা ইসলামের বাগী! বরং প্রচলিত অনাচার ও অবিচার যাদেরকে বিদ্রোহের উসকানী দিয়েছে।
আমাদের মূল সমস্যা পাঞ্জাবীপাঠানসিন্ধী বা মুহাজির নয়এদের কোনো এক পক্ষকে নিরঙ্কুশযালিম আর অন্য পক্ষকে নিরঙ্কুশ মাযলুম সাব্যস্ত করা মারাত্মক না-ইনসাফী। ধর্ম ও বুদ্ধির কোনো বিচারেই এ অতিসরলীকরণ গ্রহণযোগ্য নয় যেযুলুম সব সময় অন্য অঞ্চলের লোকেরা করে থাকে। আর স্বদেশী বা নিজ ভাষাভাষী কেউ যুলুম করলেও তা যুলুম নয়তা ইনসাফ ও অধিকার রক্ষার প্রয়াস!
আমাদের মূল সমস্যা ঐ বেদ্বীনী ও আল্লাহ-বিস্মৃতিযা যালিমকে নিঃশঙ্ক চিত্তে যুলুমে প্ররোচিত করে। এই মানসিকতাই সব জায়গায় যুলুম অবিচারের বাজার গরম করে রেখেছে। এ মানসিকতাই সর্বদা অন্যের কাছে নিজের তথাকথিত অধিকার দাবি করে এসেছে। অথচ না তার আছে নিজ কর্তব্যের কোনো অনুভতিনা অন্যের অধিকারসমূহের কোনো রেয়ায়েত।
এই খোদাভীতিহীন বেদ্বীন মানসিকতা যতদিন থাকবেততদিন অন্যায়-অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। প্রতিটি প্রদেশ -আল্লাহ না করুন- একে একে আলাদা হয়ে গেলেও। বাংলাদেশ-অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে।
جلال بادشا ہی ہو  يا جمہوری  تماشا ہو +جدا ہوديں سياست سے تورہجاتي ہے چنگيزی
বাদশাহী জালাল হোকগণতন্ত্রের  কৌতুক হোক+রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা হলে থেকে যায় চেংগীজ-তন্ত্র।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন