বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জুমার খুতবা চলাকালীন সময়ে তাহিয়াতুল মসজিদের নামায পড়ার বিধান

জুমার খুতবা চলাকালীন সময়ে তাহিয়াতুল মসজিদের নামায পড়ার বিধান

জুমআ’র খুৎবা চলাকালীন দু ধরণের লোকের নামায পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • (১) খুতবা শুরু করার পূর্বে যারা মসজিদে প্রবেশ করে।
  • (২) খুতবা চলাকালীন সময়ে যারা মসজিদে প্রবেশ করে।
হুজ্জতের আলোকে খুতবা চলাকালিন সময়ে এ উভয় শ্রেনীর নামায পড়ার অনুমতি নেই।আমরা এখানে এ এভয় বিষয়ের ব্যাপারে হুজ্জত সহ আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় টপিকটির ব্যাপারে দু ধরণের হাদীস থাকায় কিছু মানুষের বিভ্রান্তি ঘটেছে যে খুতবার সময়ও কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে তার নামায পড়তে হবে। কিন্তু এর বিপরীতে আমাদের কথা হল হুজ্জতের আলোকেই জুমার খুতবার সময় কোন ধরণের নামায পড়া যাবে না। জুমার খুতবা চলাকালীন নামায পড়া মর্মে যে সকল হাদীস বুখারী মুসলিম সহ অন্য কিতাবে রয়েছে সেগুলোর উপযুক্ত আলোচনা আমরা এ নোটের শেষে করবো ইনশাআল্লাহ। তাই এর আগে হুজ্জজতের আলোকে যে আলোচনা হবে সেগুলো গুরুত্বের সাথে দেখার অনুরোধ রইলো।

জুমার খুতবার সময় আগত ব্যাক্তির নামায আদায় না করা কি কিয়াস দিয়ে প্রমানিতঃ
কিছু ভাই বলেন যে জুমার দিন খুতবা চলাকানিন সালাত পড়ার আদেশ মারফু হাদীসে রয়েছে। সুতরাং এর বিপরীতে নামায না পড়ার কথা কিয়াস দ্বারা প্রমান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ যুক্তির আসল হাকিকত একটি উদাহারণ দিলেই বুঝতে পারবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম থেকে বেতেরের নামাযকে তিন রাকায়াত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। এর সনদ একদম সহীহ। তাহলে বেতেরের নামায তিন রাকায়াত যে পড়া হয় সেটাকি কিয়াস দ্বারা প্রমানিত??
না, কিয়াস নয়। বরং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম থেকেই বেতেরের তিন রাকায়াত সালাত আদায়ের কথা একাধিক সহীহ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।
তাহলে তিন রাকায়াত বেতেরের নিষেধাজ্ঞার হাদীসের কি ব্যাক্ষা ???
হুজ্জতের আলোকে সঠিক ব্যাক্ষা না জেনেই যদি কেউ বলে দেয় যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের হুকুমের বিরুদ্ধে গিয়ে তিন রাকায়াত বেতের পড়া কিয়াস দ্বারা প্রমানিত তাহলে তার এলেমের ব্যাপারে দোয়া করি যেন আল্লাহ তাকে সঠিক এলেম দান করেন এবং তার অপপ্রচার থেকে উম্মতকে হেফাযত করেন।
এরকমই একটা ব্যাপার হল জুমার সালাতের সময় আগত ব্যাক্তির নামায পড়ার ব্যাপারটি। এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আহলে হাদীস ভাইয়েরা বার বার স্লিপ করেন। এবার তাহলে আমরা আমাদের দাবীর পক্ষে দালায়িল সমূহ পেশ করবো ইনশাআল্লাহ -

জুমার খুতবার সময় আগত ব্যাক্তির নামায আদায় করা মাকরুহঃ
মারফু রেওয়ায়েত
১ম দলিলঃ
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ إِسْحَاقَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ عَطَاءٍ الْخُرَاسَانِيِّ قَالَ كَانَ نُبَيْشَةُ الْهُذَلِيُّ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ الْمُسْلِمَ إِذَا اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثُمَّ أَقْبَلَ إِلَى الْمَسْجِدِ لَا يُؤْذِي أَحَدًا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ الْإِمَامَ خَرَجَ صَلَّى مَا بَدَا لَهُ وَإِنْ وَجَدَ الْإِمَامَ قَدْ خَرَجَ جَلَسَ فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ حَتَّى يَقْضِيَ الْإِمَامُ جُمُعَتَهُ وَكَلَامَهُ إِنْ لَمْ يُغْفَرْ لَهُ فِي جُمُعَتِهِ تِلْكَ ذُنُوبُهُ كُلُّهَا أَنْ تَكُونَ كَفَّارَةً لِلْجُمُعَةِ الَّتِي قَبْلَهَا
হযরত নুবাইশা হুজালী রসূলুল্লাহ স.-এর ইরশাদ বর্ণনা করেন যে, যখন কোন মুসলমান জুমআর দিন গোসল করে অতঃপর মসজিদে আসে এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে ইমাম সাহেব খুৎবার জন্য বের না হয়ে থাকলে যতটুকু সম্ভব নামায পড়ে। আর ইমাম সাহেব বের হয়ে গিয়ে থাকলে বসে পড়ে এবং ইমাম সাহেব খুৎবা ও জুমআ শেষ না করা পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে শোনে এবং চুপ থাকে; তাহলে, যদি এ জুমআয় তার সকল গুনাহ মাফ নাও হয় তবে পূর্ববর্তী জুমআ পর্যন্ত গুনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৭২১)
হাদীসটির স্তর:   মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, صحيح لغيره হাদীসটি সহীহ লিগয়রিহী। (মুসনাদে আহমাদ-২০৭২১)
সারসংক্ষেপ :  এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম সাহেব খুতবা দেয়ার জন্য মসজিদে আগনের পরে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে নামায পড়বে না। বরং সরাসরি বসে পড়বে এবং মনযোগ সহকারে ইমামের খুৎবা শুনবে। অর্থাৎ ইমাম সাহেব বের হয়ে থাকলে সব শ্রেনীর জন্য দুটি কাজ। এক হল বসে পড়া এবং দুই হল খুতবা শুনা ও চুপ থাকা।

২য় দলিলঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ مُعَاوِيَةَ يَعْنِي ابْنَ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَجَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ: ” اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ، وَآنَيْتَ ”
হযরত আবু যাহরিয়া রহ. বলেন: জুমআর দিন আমি হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুস্র রা.-এর নিকটে বসা ছিলাম। তিনি বললেন: এক লোক মানুষের গর্দান ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলো। তখন রসূলুল্লাহ স. তাকে বললেন: তুমি বসে পড়ো। তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছো এবং বিলম্ব করে ফেলেছো। (মুসনাদে আহমাদ-১৭৬৯৭,আবু দাউদ-১১১৮, নাসাঈ-১৪০২, তহাবী-২১৫৬)
হাদীসটির স্তর:  সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী। মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন, إسناده صحيح على شرط مسلم. হাদীসটির সনদ মুসলিমের শর্তে সহীহ। (মুসনাদে আহমাদ-১৭৬৯৭) এ হাদীসের ব্যাপারে অনুরূপ মন্তব্য করেছেন ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ এবং ইমাম জাহাবী রহ. (মুসতাদরাকে হাকেম-১০৬১) আবু দাউদ এবং নাসাঈর তাহকীকে শায়খ আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম তহাবী রহ. এ হাদীসের শেষাংশে আবু যাহরিয়ার একটি মন্তব্য বর্ণনা করেন যে, قَالَ أَبُو الزَّاهِرِيَّةِ وَكُنَّا نَتَحَدَّثُ حَتَّى يَخْرُجَ الْإِمَامُ أَفَلَا تَرَى أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ هَذَا الرَّجُلَ بِالْجُلُوسِ , وَلَمْ يَأْمُرْهُ بِالصَّلَاةِ আবু যাহরিয়া রহ. বলেন, ইমাম বের হয়ে আসার পূর্ব পর্যন্ত আমরা কথা-বার্তা বলতাম। তুমি দেখ না, রসূলুল্লাহ স. ওই ব্যক্তিকে বসতে বললেন; কিন্তু নামায পড়তে বললেন না। (তহাবী: ২১৫৬)
সারসংক্ষেপ :  এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম সাহেব খুতবা দেয়ার জন্য মসজিদে আগনের পরে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে মানুষের গর্দান ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবে না এবং নামাযও পড়বে না। বরং সরাসরি বসে পড়বে এবং মনযোগ সহকারে ইমামের খুৎবা শুনবে।
মূলত এ সাহাবী মাত্র মসজিদে প্রবেশ করেছেন।এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বলেছেন “তুমি বিলম্ব করে ফেলেছো”। যদি আগে আসতেন তাহলে বিলম্ব শব্দ আসারই কথা না। আর পূর্বে আসলে তিনিতো খুতবার মধ্যে বসে থাকার কথা এবং বসা থেকে উঠে কেউকি মানুষের গর্দান ডেঙ্গিয়ে সামনে যায় ? অর্থাৎ এটা নিশ্চিত যে তিনি মাত্র প্রবেশ করেই মানুষকে ডেঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তখনই তাকে বসতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন নামায পড়তে বলা হয় নি।

তৃতীয় দলিলঃ
حَدَّثَنَا عَبْدَانُ قَالَ أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللَّهِ قَالَ أَخْبَرَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِيهِ عَنْ ابْنِ وَدِيعَةَ حَدَّثَنَا سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ ثُمَّ ادَّهَنَ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبٍ ثُمَّ رَاحَ فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ فَصَلَّى مَا كُتِبَ لَهُ ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ أَنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى (رَوَاه الْبُخَارِىُّ فِىْ بَابِ لاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ يَوْمَ الجُمُعَةِ)
হযরত সালমান ফারসী রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে; অতঃপর তেল মেখে অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে মসজিদে যায়। আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামায আদায় করে। অতঃপর ইমাম বের হয়ে এলে চুপ থাকে। তার এ জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত মধ্যবর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারী: ৮৬৪, পৃষ্ঠা: ১/১২৪)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামেউল উসূল-৭১০৩)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, জুমআর দিন কেউ ইমামের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করে থাকলে ইমাম মসজিদে আসার পূর্ব পর্যন্ত যথা সম্ভব নামায পড়বে। অতঃপর ইমাম সাহেব মসজিদে প্রবেশ করলে চুপ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কথা-বার্তা, নামায-কালাম কিছুই করবে না। তাহলে পরবর্তি জুমআ পর্যন্ত তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।

৪র্থ দলিলঃ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: ্রسَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ وَالْإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ فَلَا صَلَاةَ وَلَا كَلَامَ حَتَّى يَفْرُغَ الْإِمَامُগ্ধ “.رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ أَيُّوبُ بْنُ نَهِيكٍ، وَهُوَ مَتْرُوكٌ، ضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ وَذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ وَقَالَ: يُخْطِئُ.
হযরত ইবনে উমর রা. বলেন, আমি রসূলুল্লাহ স.কে বলতে শুনেছি, ইমাম মিম্বারে থাকা অবস্থায় যদি তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তাহলে ইমাম খুৎবা থেকে অবসর হওয়ার পূর্বে কোন নামায পড়বে না এবং কথাও বলবে না। আল্লামা হাইসামী বলেন, এ হাদীসটি তবারানী তাঁর মুজামুল কাবীর কিতাবে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের সনদে একজন রাবী আছেন আইয়ূব বিন নাহীক তিনি পরিত্যাক্ত। একদল তাঁকে জঈফ বলেছেন আর ইবনে হিব্বান তাঁর নাম ছিকাত কিতাবে এনে বলেন, তিনি ভুল করেন। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-৩১২০)
হাদীসটির স্তর: হাসান। আল্লামা হাইসামী যে রাবীর উপর আপত্তি করেছেন ইবনে হিব্বান রহ. তাঁর ব্যাপারে এ মন্তব্য করেন যে, يخطىء وَكَانَ مولى سعد بن أبي وَقاص يعْتَبر بحَديثه من غير رِوَايَة أبي قَتَادَة الْحَرَّانِي عَنهُ তিনি ভুল করেন। তিনি ছিলেন হযরত সাআদ বিন আবি ওয়াক্কাসের আযাদকৃত গোলাম। আবু কতাদা র্হারানী ব্যতীত তাঁর থেকে অন্যদের বর্ণনা গ্যহণযোগ্য। (ছিকাত-৬৭২৮) আল্লামা কাসেম বিন কুতলুবুগা রহ.ও তাঁর নাম বিশ্বস্তদের তালিকাসম্বলিত কিতাব ছিকাতু মিম্মাল লাম ইয়াকা’ ফিল কুতুবিস সিত্তাহ-১৮৫৭ নম্বরে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং কোন বিষয়ে এ ধরণের রাবীর বর্ণনা একক বর্ণনার উপর ভরসা করা যায় না। তবে অন্যান্য বর্ণনা এবং সাহাবায়ে কিরামের আমলের দ্বারা খুৎবার সময় নামায না পড়ার বিষয়টি যেহেতু প্রমাণিত। অতএব, এ রাবীর বর্ণনা দ্বারা নিঃসন্দেহে উক্ত বিষয়টি আরও শক্তিশালী হবে।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দ্বারা সম্পূর্ণ স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, খুৎবা চলাকালীন কেউ মসজিদে আসলে সে নামায পড়বে না।

বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের দৃষ্টিতে খুতবা চলাকালীন নামাযের বিধান
৫ম দলিলঃ
” أَخْبَرَنَا أَبُو عَامِرٍ الْعَقَدِيُّ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، مِنْ وَلَدِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ عَنْ إسْمَاعِيلَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ سَائِبِ بْنِ يَزِيدَ، قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي فِي زَمَنِ عُمَرَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَإِذَا خَرَجَ عُمَرُ، وَجَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ قَطَعْنَا الصَّلَاةَ، وَكُنَّا نَتَحَدَّثُ وَيُحَدِّثُونَا، وَرُبَّمَا نَسْأَلُ الرَّجُلَ الَّذِي يَلِيهِ عَنْ سُوقِهِ وَمَعَاشِهِ، فَإِذَا سَكَتَ الْمُؤَذِّنُ خَطَبَ، وَلَمْ يَتَكَلَّمُ أَحَدٌ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ
ইসহাক বিন রাহওয়াইহি তাঁর মুসনাদ কিতাবে হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ রা. থেকে বর্ণনা করেন: আমরা হযরত উমার রা.-এর যুগে জুমআর দিন নামায পড়তে থাকতাম। যখন তিনি বের হতেন এবং মিম্বারে বসতেন আমরা নামায পড়া বন্ধ করে দিতাম। আর আমরা কথা বলতাম, তিনিও আমাদের সাথে কথা বলতেন। কখনও কখনও আমরা পাশের ব্যক্তিকে তার বাজার এবং জীবন যাপনের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম। অতঃপর মুআজ্জিন নীরব হলে তিনি খুতবা দিতেন। আর খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত কেউ কথা বলত না (নাছবুর রায়াহ, আদদিরায়াহ: জুমআ অধ্যায়)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এটাকে উত্তম সনদ বলেছেন। (আদদিরায়াহ: জুমআ অধ্যায়)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত উমার রা. যখন মিম্বারে বসতেন তখন আমরা নামায পড়া বন্ধ করে দিতাম। এ থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, ইমামের খুতবা চলাকালে সাহাবায়ে কিরাম কোন নামায পড়তেন না এবং কোন কথাও বলতেন না। যদি নতুন ব্যাক্তি এসে নামায পড়তেন তাহলে অবশ্যই বর্ণনাকারী সেটাও উল্লেখ করতেন কিন্তু তিনি বললেন “আমরা নামায পড়া বন্ধ করে দিতাম।” অতএব, সাহাবায়ে কিরাম এবং খলীফায়ে রাশেদের আমল দ্বারা প্রমাণিত যে, ইমামের খুতবা চলাকালীন সময়ে নামায পড়া যায় না।

৬ষ্ঠ দলিলঃ
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ كَعْبٍ الأَنْطَاكِيُّ، حَدَّثَنَا مَخْلَدُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ لَمَّا اسْتَوَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَ الْجُمُعَةِ قَالَ ‏اجْلِسُوا.‏ فَسَمِعَ ذَلِكَ ابْنُ مَسْعُودٍ فَجَلَسَ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ فَرَآهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏”‏ تَعَالَ يَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ قَالَ أَبُو دَاوُدَ هَذَا يُعْرَفُ مُرْسَلاً إِنَّمَا رَوَاهُ النَّاسُ عَنْ عَطَاءٍ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَمَخْلَدٌ هُوَ شَيْخٌ.‏
হযরত জাবের রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. জুমআর দিন খুতবার জন্য মিম্বারের ওপর উঠে বললেন: তোমরা বসে পড়। হযরত ইবনে মাসউদ রা. এ কথা শুনে দরজার ওপরই বসে পড়লেন। (তিনি তখন ওই পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন) রসূলুল্লাহ স. বললেন: হে আব্দুল্লাহ! এদিকে এসো। ইমাম আবু দাউদ রহ. বলেন: এটা মুরসাল হাদীস হিসেবে পরিচিত। লোকেরা এটাকে রসূলুল্লাহ স. থেকে আতা রহ.-এর মাধ্যমে বর্ণনা করেন। (আবু দাউদ: ১০৯১, পৃষ্ঠা: ১/১৫৬)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। ইয়াকুব ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর ইয়াকুব ثقةٌ বিশ্বস্ত। (তাকরীব: ৮৮২৮) শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ১০৯১)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, ইবনে মাসউদ রা. মাত্র মসজিদে প্রবেশ করছিলেন তখনই রসূলুল্লাহ স. বসে পড়ার নির্দেশ দিলেন। আর ইবনে মাসউদ রা. সাথে সাথে দরজায় বসে পড়লেন। রসূলুল্লাহ স. তাঁকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন; কিন্তু তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়ার কথা বললেন না। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম খুৎবা দেয়ার জন্য মিম্বারে ওঠার পরে আগমনকারী ব্যক্তি আর নামাযে দাঁড়াবে না; বরং ইমামের খুতবা শুনতে আরম্ভ করবে।

৭ম দলিলঃ
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ لَيْثٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، وَعَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْحَارِثِ، عَنْ عَلِيٍّ، وَعَنْ سُفْيَانَ، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، عَنْ عَطَاءٍ، أَنَّهُمْ كَرِهُوا الصَّلَاةَ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
হযরত আলী রা., হযরত মুজাহিদ ও হযরত আতা বিন আবী রবাহ থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা জুমআর দিনে ইমামের খুতবার সময় নামায পড়া অপছন্দ করতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫২১০)
হাদীসটির স্তর:  হাসান ও সহীহ এবং মাওকূফ ও মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী। শুধু হযরত আলী রা. থেকে বর্ণনাকারী হারিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মিশ্র মন্তব্য রয়েছে। অধিকাংশ ইমাম তাঁকে জঈফ বললেও কোন কোন ইমাম তাকে গ্রহণযোগ্য বলেছেন। আহমাদ বিন সালেহ বলেন: الحارث الاعور ثقة ما احفظه وما احسنه ما روى عن على وأثنى عليه “হারিস বিশ্বস্ত, তিনি কত স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন, হযরত আলী রা. থেকে তার বর্ণনা কত সুন্দর এবং তিনি তার প্রশংসা করেছেন”। ইবনে আবি খাইসামা বলেন: قيل ليحى يحتج بالحارث فقال مازال المحدثون يقبلون حديثه “ইমাম ইয়াইয়া রহ.কে জিজ্ঞেস করা হলো: হারিসের দ্বারা কি দলীল গ্রহণ করা যায়? তিনি বললেন: মুহাদ্দিসগণ তার হাদীস গ্রহণ করে থাকেন”। ইমাম নাসাঈ বলেন: ليس به بأس “কোন অসুবিধা নেই”। (তাহজীবুত তাহজীব) সুতরাং হযরত আলী রা.-এর বর্ণনাটি হাসান-মাওকূফ। আর মুজাহিদ ও আতা রহ.-এর বর্ণনা সহীহ-মাকতু’।
এক ভায়ের পোস্টে দেখলাম যে তিনি এ হাদীসকে জাল বলেছেন এ রাবী হারিসের কারণে। ব্যাচারার তার এলেমের পরিধীকে একটু প্রসস্ত করলেই দেখবেন যে এ রাবীর বর্ণনা ৪ টি সুনানেই রয়েছে। তার বর্ণনা যদি জাল হয় তাহলে এটা মানতে হবে যে সিয়া সেত্তায় জাল রেওয়াত রয়েছে। এবং ইমাম তিরিমিযি রাহঃ তার বর্ণীত হাদীসকে হাসান বলেছেন(তিরমিযি শরীফ হা,নং ২৭৩৬)। ইমাম শাবী রাহঃ এই হারিছের ব্যাপারে বলেছেন যে তার মতাদার্শ(শিয়া) মিথ্যা। এর দ্বারা তিনি কাজ্জাব হয়ে যাবেন কি??? তাহলেতো বুখারী মুসলিমের হাদীসও জাল হয়ে যাবে। বুখারী মুসলিমে শিয়া রাবীর হাদীস বর্ণিত হয়েছে যারা হাদীসের ক্ষেত্রে ছেকাহ। অর্থাৎ শিয়া হাদীস বর্ণনায় ছেকা হলে তার হাদীস গ্রহনযোগ্য। আর ইমাম শাবী নিজেই তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতারং হারিস কাজ্জাব নয় বরং তার মতাদার্শ মিথ্যা।
ঐ ভাই এ হাদীসের অন্য দুজন রাবীকে মুদাল্লিস বলেছেন যারা এ হাদীসে আন দিয়ে বর্ণনা করেছেন। একজন হল সুফিয়া সাওরী এবং অন্যজন হলেন আবু ইসহাক । তাদলীসের নিতীমালা পরিপূর্ণ রুপে না জানার কারনে ব্যাচার হাদীসের বড় বড় দুজন ইমামের আন দিয়ে বর্ণিত হাদীসকে অস্বিকার করে বসেছেন। অথচ এ উভর রাবীর আন দিয়ে বর্ণিত হাদীস বুখারি মুসলিমে রয়েছে। তাহলে বুখারী মুসলিমে বর্ণিত এ হাদীস গুলোর কি অবস্থা হবে? জোরে আমিন বলার প্রধান হাদীসের রাবী সুফিয়ান সাওরি যা আনি দিয়ে বর্ণিত হয়েছে। তাহলে সেটার কি হবে???
সারসংক্ষেপ : হযরত আলী রা., মুজাহিদ এবং আতা রহ.-এর অভিমত এই যে, তাঁরা ইমামের খুৎবা চলাকালীন নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন। আর সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈগণের আমলের ভিত্তি অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. এর হাদীস। এ থেকে প্রতিয়মাণ হয় যে, রসূলুল্লাহ স. খুৎবার সময় নামায পড়াকে অপছন্দ করতেন।

৮ম দলিলঃ
حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ الْعَوَّامِ عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ ثَعْلَبَةَ بْنِ أَبِي مَالِكٍ الْقُرَظِيِّ قَالَ: أَدْرَكْتُ عُمَرَ وَعُثْمَانَ، فَكَانَ الْإِمَامُ إِذَا خَرَجَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، تَرَكْنَا الصَّلَاةَ
হযরত সা’লাবা বিন আবী মালেক রা. বলেন: আমি হযরত উমার ও উসমান রা.কে পেয়েছি। জুমআর দিন যখন ইমাম বের হতেন আমরা নামায পড়া বন্ধ করে দিতাম।(ইবনে আবী শাইবা: ৫৩৩৯)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকূফ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর আবু মালেককে ইমাম জাহাবী রহ. সাহাবাদের তালিকায় গুণেছেন। (আল কাশেফ-৭১১)
সারসংক্ষেপ : সাহাবায়ে কিরামের আমল থেকে প্রমাণিত হলো যে, তাঁরা ইমামের খুৎবা চলাকালীন নামায পড়াতেন না। আর সাহাবায়ে কিরামের আমলের ভিত্তি অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. এর হাদীস। এ থেকে প্রতিয়মাণ হয় যে, রসূলুল্লাহ স. খুৎবার সময় নামায পড়াকে অপছন্দ করতেন।

৯বম দলিলঃ
حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، عَنْ حَجَّاجٍ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، وَابْنِ عُمَرَ:أَنَّهُمَا كَانَا يَكْرَهَانِ الصَّلَاةَ وَالْكَلَامَ بَعْدَ خُرُوجِ الْإِمَامِ
হযরত ইবনে উমার ও হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত: তাঁরা উভয়ে ইমাম বের হওয়ার পরে নামায পড়া এবং কথা বলা মাকরুহ মনে করতেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫৩৪০)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাওকূফ। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত ইবনে উমার ও হযরত ইবনে আব্বাস রা.-এর অভিমত এই যে, তাঁরা ইমামের খুৎবা চলাকালীন নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন। আর সাহাবায়ে কিরামের আমলের ভিত্তি অবশ্যই রসূলুল্লাহ স. এর হাদীস। এ থেকে প্রতিয়মাণ হয় যে, রসূলুল্লাহ স. খুৎবার সময় নামায পড়াকে অপছন্দ করতেন।

বিশিষ্ট তাবিঈগণের দৃষ্টিতে খুতবা চলাকালীন নামাযের বিধান
১০ম দলিলঃ
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، قَالَ: أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنِ ابْنِ الْمُسَيِّبِ قَالَ: خُرُوجُ الْإِمَامِ يَقْطَعُ الصَّلَاةَ، كَلَامُهُ يَقْطَعُ الْكَلَامَ
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. বলেন: ইমামের মসজিদে আগমন অন্যদের নামায পড়াকে নিষিদ্ধ করে দেয়। আর তাঁর কথা বলা অন্যদের কথা বলাকে নিষিদ্ধ করে দেয়। (আব্দুর রজ্জাক: ৫৩৫১, ইবনে আবী শাইবা: ৫৩৪২)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী।

১১তম দলিলঃ
حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، قَالَ: أَنَا هِشَامٌ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: إِذَا خَرَجَ الْإِمَامُ، فَلَا يُصَلِّ أَحَدٌ حَتَّى يَفْرُغَ الْإِمَامُ
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহ. বলতেন: ইমাম যখন মসজিদের দিকে আসেন তখন কেউ নামায পড়বে না; যতক্ষণ তিনি নামায শেষ না করেন। (ইবনে আবী শাইবা: ৫২১১)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী।

১২ তম দলিল
حَدَّثَنَا ابْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ إِذَا قَعَدَ الْإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ فَلَا صَلَاةَ
হযরত উরওয়া বিন যুবায়ের রহ. বলেন: ইমাম মিম্বারে বসলে কেউ কোন নামায পড়বে না। (ইবনে আবী শাইবা: ৫২১৩)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী। সুতরাং হাদীসটি সহীহ।

১৩ তম দলিল
حَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ تَوْبَةَ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ: كَانَ شُرَيْحٍ إِذَا أَتَى الْجُمُعَةَ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ خَرَجَ الْإِمَامُ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، وَإِنْ كَانَ خَرَجَ، جَلَسَ وَاحْتَبَى وَاسْتَقْبَلَ الْإِمَامَ، فَلَمْ يَلْتَفِتْ يَمِينًا وَلَا شِمَالًا
হযরত শা’বী রহ. বলেন: জুমআর দিন ইমাম মসজিদে না এসে থাকলে হযরত কাজী শুরাইহ রহ. দু’রাকাআত নামায পড়তেন। আর ইমাম বের হয়ে আসলে তিনি চাদর গায়ে জড়িয়ে ইমামকে সামনে রেখে বসে যেতেন। আর ডানে-বামে লক্ষ্য করতেন না। (ইবনে আবী শাইবা; ৫২১৯)
হাদীসটির স্তর: সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ সকল আছার থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিশিষ্ট তাবিঈদের একটি বড় দল ইমামের খুতবা চলাকালীন মসজিদে উপস্থিত হলে নামায পড়তেন না বা পড়ার অনুমতি দিতেন না। বরং তারা এটাকে মাকরুহ মনে করতেন। তাদের কয়েকজনের নামের তালিকা মন্তব্যসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লামা ইবনে কুদামা মাকদেসী বলেন,
وَقَالَ شُرَيْحٌ، وَابْنُ سِيرِينَ، وَالنَّخَعِيُّ، وَقَتَادَةُ، وَالثَّوْرِيُّ، وَمَالِكٌ، وَاللَّيْثُ، وَأَبُو حَنِيفَةَ، يَجْلِسُ، وَيُكْرَهُ لَهُ أَنْ يَرْكَعَ؛ لِأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ্রلِلَّذِي جَاءَ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ: اجْلِسْ، فَقَدْ آذَيْتَ وَأَنَيْتَগ্ধ رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ وَلِأَنَّ الرُّكُوعَ يَشْغَلُهُ عَنْ اسْتِمَاعِ الْخُطْبَةِ، فَكُرِهَ، [مَسْأَلَةٌ دَخَلَ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ]
অনুবাদ : কাজী শুরাইহ, ইবনে সীরীন, ইবরাহীম নাখঈ, কতাদা, সুফিয়ান সাওরী, ইমাম মালেক, লাইস বিন সাআদ এবং ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, (খুৎবা চলাকালীন কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে) নামায পড়া মাকরূহ। কেননা খুৎবার সময় মানুষের গর্দান ডিঙ্গিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া ব্যক্তিকে রসূলুল্লাহ বলে ছিলেন যে, তুমি বসে যাও। তুমি মানুষকে কষ্ট দিচ্ছ এবং দেরী করে ফেলেছো। হাদীসটি ইবনে মাযাহহ বর্ণনা করেন। উপরুন্ত এ সময় নামায পড়া মনযোগ সহকারে খুৎবা শোনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। অতএব এটা মাকরূহ হবে। (আল মুগনী, মাসআলা: ইমামের খুৎবারত অবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে)
সারসংক্ষেপ : ইমাম মুগনী রহ.-এর এ বর্ণনার প্রতি লক্ষ্য করুন! কেবল হানাফীরা নয়; বরং দ্বীনের ঝান্ডাবাহী মুহাদ্দিস ও ফকীহদের এক বড় দল একই মত পোষন করে থাকেন যে, ইমামের খুৎবারত অবস্থায় কেউ মসজিদে প্রবেশকরলে সে নামায পড়বে না। বরং চুপ করে বসে পড়বে এবং মনযোগ সহকারে ইমামের খুৎবা শুনবে।
ফায়দা : কুরআনে কারিমের আয়াত, সহীহ সনদে বর্ণিত রসূলুল্লাহ স.এর হাদীস, বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবিঈগণের আমল ও মতামতের দ্বারা এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, জুমআর দিনে খুৎবা চলাকালীন নামায পড়া যাবে না। ইমাম পূর্ব থেকে খুৎবা শুরু করে থাকুক বা তিনি পরে আগমন করুক কোন অবস্থাতেই এতে মাসআলার কোন পরিবর্তন ঘটবে না। আমরা এ বিধান বিশ্বাস করি এবং এ অনুযায়ী আমল করে থাকি।

ইমামের খুতবা চলাকালীন কেউ মসজিদে উপস্থিত হলে সে দুই রাকাত নামায পড়া মর্মে হাদীস সমূহের ব্যাপারে আলোচনা
হযরত জাবের রা. বলেন: রসূলুল্লাহ স. মুসল্লীদের সামনে জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন এমন সময় (সুলাইক নামক) এক ব্যক্তি উপস্থিত হলো। রসূলুল্লাহ স. তাকে বললেন: হে অমুক! তুমি নামায পড়েছ? তিনি বললেন: না, পড়িনি। রসূলুল্লাহ স. বললেন: ওঠো, দু’রাকাত নামায পড়। (বুখারী: ৮৮৩)
শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি সিহাহ সিত্তার সব কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত: রসূলুল্লাহ স. খুতবা দিচ্ছিলেন। এ সময় বললেন: কেউ যদি এমন সময় জুমআর নামাযে আসে যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হয়ে আসছে তবে সে যেন দুই রাকাত নামায পড়ে নেয়। (মুসলিম: ১৮৯৫)
উপরোক্ত হাদীস দু’টি সহীহ সনদে বর্ণিত। এ সহীহ হাদীসের কারণে আমরা বিশ্বাস করি যে, খুৎবার সময় কেউ মসজিদে আসলে তাকে দুই রাকাত নামায পড়তে হবে এটা রসূলুল্লাহ স.-এর নির্দেশ। তবে এটা এখনও আমলযোগ্য বহাল ছুন্নাত কি না সে বিষয় নিয়ে উম্মাতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। নিম্নে বর্ণিত কারণে আমরা এ নির্দেশকে রহিত মনে করি।
প্রথম কারণ:(হাদীস সমূহের ব্যাক্ষা)
খুৎবা শোনা আল্লাহ তাআলার নির্দেশ এবং ওয়াজিব। আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশের প্রতি খেয়াল না করে রসূলুল্লাহ স. ভিন্ন কোন হুকুম জারী করবেন তা কোনক্রমেই হতে পারে না। তাই রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক খুতবার সময় নামায পড়ার নির্দেশ হতে পারে সাময়িক কারণের জন্য প্রযোজ্য। যে কারণে খুৎবার সময় নামায আদায়ের হুকুম পরে আর কার্যকরী থাকেনি। এর প্রমাণ হিসেবে তহাবী শরীফ হতে একটি সহীহ হাদীস পেশ করছি।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدِ بْنِ هِشَامٍ الرُّعَيْنِيُّ , قَالَ: ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ , قَالَ: أنا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ , قَالَ: حَدَّثَنِي ابْنُ عَجْلَانَ , عَنْ عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللهِ أَخْبَرَهُ , عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ,: أَنَّ رَجُلًا دَخَلَ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ , فَنَادَاهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , فَمَا زَالَ يَقُولُ: ্রادْنُগ্ধ حَتَّى دَنَا , فَأَمَرَهُ , فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ وَعَلَيْهِ خِرْقَةُ خَلَقٍ , ثُمَّ صَنَعَ مِثْلَ ذَلِكَ فِي الثَّانِيَةِ , فَأَمَرَهُ بِمِثْلِ ذَلِكَ , ثُمَّ صَنَعَ مِثْلَ ذَلِكَ فِي الْجُمُعَةِ الثَّالِثَةِ , فَأَمَرَهُ بِمِثْلِ ذَلِكَ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلنَّاسِ: ্রتَصَدَّقُواগ্ধ فَأَلْقَوُا الثِّيَابَ , فَأَمَرَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِأَخْذِ ثَوْبَيْنِ
হযরত আবু সাইদ খুদরাী রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স. খুৎবারত অবস্থায় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। রসূলুল্লাহ স. তাঁকে ডেকে বলতে থাকলেন যে, নিকটে এসো। তিনি নিকটে আসলে রসূলুল্লাহ স. তাঁকে বসার পূর্বে দু’রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁর গায়ে ছিলো পুরাতন কাপড়। দ্বিতীয় জুমআতেও ওই ব্যক্তি একই রকম করলো। রসূলুল্লাহ স.ও তাঁকে অনুরূপ নির্দেশ দিলেন। আবার তৃতীয় জুমআতেও একই ঘটনা ঘটলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ মানুষদেরকে বললেন, তোমরা ছদকা করো। তারা কাপড় ছদকা করলে রসূলুল্লাহ স. সেখান থেকে দুটি কাপড় গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। (সংক্ষেপিত: তহাবী-২১৫৫)
হাদীসটির স্তর: সহীহ। মুহাম্মাদ বিন হুমায়েদ ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সকলেই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর মুহাম্মাদ বিন হুমায়েদের ব্যাপারে ইবনে ইউনুস বলেন, كان ثقة তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত। (ছিকাতু মিম্মাল লাম ইয়াকা’ ফিল কুতুবিস সিত্তাহ-৯৬৭৯)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসের মধ্যে দু’টি ব্যতিক্রমী বিষয় বিদ্যমান রয়েছে।
(এক.) খুৎবার মধ্যে আগত ব্যক্তির সাথে কথা বলা। তাঁকে কাছে ডাকতে থাকা, নামায পড়তে বলা এবং তাঁর নামায শেষে সাহাবায়ে কিরামকে ছদকার নির্দেশ দেয়া।
(দুই.) সাহাবায়ে কিরামের কাপড় দান করা এবং এ দানকৃত কাপড় থেকে তাঁকে দুটি কাপড় গ্রহণের নির্দেশ দেয়া।
এটা অত্যন্ত সাধারণ কথা যে, জুমআর মসজিদে কেউ দান করার মত অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে আসে না। বরং রসূলুল্লাহ স. কর্তৃক ছদকার নির্দেশ দানের পরে তাঁরা বাড়িতে গিয়ে কাপড় এনে দিয়েছেন; এটাই হওয়ার কথা।
হাদীসে বিদ্যমান এ দু’টি বিষয় জানার পরে লক্ষ্য করুন। যারা খুৎবা চলাকালীন নামায পড়ার অনুমতি দিয়ে থাকেন তারা উক্ত খুৎবায় আরও যা ঘটে ছিলো সেগুলোরও অনুমতি দেন কি? খুৎবার মধ্যে
কথা বলা,
ছদকার নির্দেশ দেয়া,
ছদকা গ্রহণ করা,
হাটা-চলা,
বাড়ি যাওয়া
সহ সকল কাজের অনুমতি এখনও খুৎবার মধ্যে বহাল আছে কি? পূর্ববর্ণিত আয়াত ও হাদীস থেকে পরিস্কার হয়ে গেছে যে, এগুলোর অনুমতি নেই। তাহলে নামাযের বিষয়টিও কি এ তালিকাভুক্ত হতে পারে না? উপরুন্ত যখন বেশ কিছু দলীল এর পক্ষে বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং এ সহীহ হাদীসের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, খুৎবা চলাকালীন নামায পড়ার বিধান প্রথমে ছিলো পরে তা রহিত হয়ে গিয়েছে।
আর যদি ধরে নেয়া হয় যে, এখনও এ আমল চলতে পারে তাহলে তহাবী শরীফ থেকে বর্ণিত এ সহীহ হাদীসের আলোকে সর্বোচ্চ এতটুকু বলা যেতে পারে যে, কোন বিশেষ কারণে যদি খতীব সাহেব তাঁর খুৎবা বন্ধ রেখে কাউকে দিয়ে নামায পড়ান তাহলে পড়াতে পারেন। এ হাদীসে যেমন ওই লোকটির দুরাবস্থা মানুষের সামনে দেখিয়ে সকলকে ছদকা দানের প্রতি উদ্ভুদ্ধ করা হয়ে ছিলো।
দ্বিতীয় কারণ:
এ হাদীসগুলো মৌলিকভাবে সূরা আ’রাফের ২০৪ নম্বর আয়াতে বর্ণিত নির্দেশের বিরোধী। কেননা বিশিষ্ট সাহাবা ও তাবিঈদের ব্যাপক মত বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত আয়াতে নামাযে সশব্দে কুরআন পাঠ এবং ইমামের খুতবার সময় শ্রতাদেরকে চুপ থেকে মনোযোগ সহকারে শ্রবণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপরে ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহ. প্রায় ৩৮টি হাদীস বর্ণনা করে বলেন:
قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: وَأَوْلَى الْأَقْوَالِ فِي ذَلِكَ بِالصَّوَابِ قَوْلُ مَنْ قَالَ: أُمِرُوا بِاسْتِمَاعِ الْقُرْآنِ فِي الصَّلَاةِ إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ وَكَانَ مَنْ خَلْفَهُ مِمَّنْ يَأْتَمُّ بِهِ يَسْمَعُهُ، وَفِي الْخُطْبَةِ. وَإِنَّمَا قُلْنَا ذَلِكَ أَوْلَى بِالصَّوَابِ، لِصِحَّةِ الْخَبَرِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا وَإِجْمَاعُ الْجَمِيعِ عَلَى أَنَّ مَنْ سَمِعَ خُطْبَةَ الْإِمَامِ مِمَّنْ عَلَيْهِ الْجُمُعَةُ، الِاسْتِمَاعَ وَالْإِنْصَاتَ لَهَا
আবু জাফর তবারী বলেন, এ ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক কথা তাদেরটি যারা বলেন যে, ইমাম যখন নামাযে কুরআন পাঠ করবেন তখন মুক্তাদীগণকে মনোযোগের সাথে শোনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং ইমামের পিছনে যারা ইক্তিদা করেছে তারা ইমামের কুরআন পাঠ শুনবে। এ আয়াতটি খুতবার ব্যাপারেও অবতীর্ণ হয়েছে। এ মতটিকে আমি এ কারণে সর্বাধিক সঠিক বলেছি, যেহেতু রসূলুল্লাহ স. থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে: واذا قرأ الإمام فانصتوا “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাক”। আর সবার ঐক্যমত্য বিদ্যমান রয়েছে যে, যাদের প্রতি জুমআর নামায জরুরী তাদের মধ্যে যারা খুতবার (শব্দ) শুনবে তাদের দায়িত্ব নীরব থাকা এবং মনোযোগের সাথে শোনা। (তাফসীরে তাবারী: সূরা আ’রাফ, ২০৪ নম্বর আয়াতের তাফসীরে)
সারসংক্ষেপ : এ বক্তব্যের মাধ্যমে ইমাম তবারী রহ. উম্মাতের ইজমা তথা ঐক্যমত বর্ণনা করলেন যে, সূরা আরাফের ২০৪ নং আয়াত খুৎবার ব্যপারেও নাজিল হয়েছে যেমন নাজিল হয়েছে নামাযে ইমামের কুরআন পাঠের ব্যাপারে। আর এটা ইমাম তাবারী মনগড়া বলেননি বরং এ ব্যাপারে ৩৮টি হাদীস বর্ণনা করার পর এ মত ব্যাক্ত করেছেন। সুতরাং মনযোগ সহকারে খুৎবা শোনার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এমন যে কোন কাজে অংশ নেয়ার অর্থই হলো উম্মাতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সূরা আরাফের ২০৪ নং আয়াতের বিধান লংঘন করা। আর খুৎবার সময় নামায পড়া উক্ত কাজের অন্যতম। সুতরাং উক্ত আয়াতের কারণে আমাদের বলতেই হচ্ছে যে, এ হাদীসগুলো হয়তো রহিত অথবা এর ভিন্য কোন ব্যাখ্যা আছে যা এ হাদীসে স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
তৃতীয় কারণ:
রসূলুল্লাহ স.-এর ঘনিষ্ট সাহাবাগণ খুতবার সময় নামায পড়ার আমল ব্যাপকহারে বর্জন করেছেন; যেমনটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, তাঁদের নিকটে অবশ্যই কোন প্রমাণ বিদ্যমান ছিলো যার ভিত্তিতে তাঁরা এ আমল বর্জন করেছেন। তাঁদের নিকটে এমন কোন প্রমাণ না থাকলে সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈগণ এত ব্যাপকহারে রসূলুল্লাহ স.-এর নির্দেশ অমান্য করবেন এটা কল্পনাও করা যায় না।
অতএব. উপরোক্ত দলীল প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা খুৎবা চলালকালীন নামায পড়ার আমলকে রহিত এবং মাকরূহ মনে করি।
সংকলনেঃ আহ্‌নাফ বিন আলী আহ্‌মাদ
দলিল সমূহ শায়খ গোলামুর রহমান সাহেব দা,বা এর ‘ সালাতুন্নবী ‘ কিতাব থেকে নেওয়া হয়েছে ।

আহলে হাদীস নাকি সুন্নাহ এর অনুসারী

বস্তুতঃ হাদীস ও সুন্নাহ এক জিনিস নয়, বরং এ দুইয়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে । উম্মতের জন্য দ্বীনের উপর চলার অনুসরনীয় পথ কে সুন্নাহ বলে । আর ” প্রত্যেক সুন্নাহই হাদীস কিন্তু সকল হাদীসই সুন্নাহ নয়।” অর্থাৎ দ্বীনের উপর চলার জন্য উম্মত সকল হাদীসকেই অনুসরন করতে পারবে না যদিও সেই হাদীসটি “সহীহ্” হয়। কেননা অনেক সহীহ্ হাদীস আছে যা অন্য সহীহ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে বা তা পূর্বের বিধান ছিল কিন্তু পরবর্তীতে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর হুকুম দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে ।
নিম্নে কিছু হাদীস উদাহারন স্বরুপ তুলে ধরলামঃ
কিছু সহীহ্ হাদীস যা সুন্নাহ নয় , অর্থাৎ এই হাদীসগুলো উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয়
১. সহীহ্ বুখারীর কিতাবুল জানায়েযের ১৩০৭ থেকে ১৩১৩ নং হাদীস সমূহ । এসব হাদীসে জানাযা বহন করে নিয়ে যেতে দেখলে সকলকে দাঁড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে । অথচ এই বিধান এই বিধান অন্যান্য সহীহ্ হাদীস দ্বারা রহিত হয়ে গিয়েছে । ( উমদাতুল কারী ৬/১৪৬)
২. ইসলামের প্রথম যুগে নামাযরত অবস্থায় কথা বলা, সালাম দেওয়া , সালামের উত্তর দেওয়া সবই বৈধ ছিল । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়। ( সহীহ্ বুখারী হা. নং- ১১৯৯, ১২০০)
৩. ইসলামের প্রথম যুগে বিধান ছিল যে, আগুনে রান্নাকৃত খাদ্য গ্রহন করলে উযু ভেঙ্গে যাবে । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায় । ( সহীহ্ বুখারী, হা.নং- ২০৮)
৪. নবীজী ( সঃ) হিজরতের পর মদীনায় ১৬/১৭ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামায আদায় করেছেন । কিন্তু পরবর্তীতে এই বিধান রহিত হয়ে যায়। ( সহীহ্ বুখারী হা. নং- ৭২৫২)

এমন অনেক হাদিস আছে যার বিধান নবীজী (সঃ) এর সঙ্গে নির্দিষ্ট । উম্মতের জন্য তার উপর আমল করা বৈধ নয়। যেমনঃ
৫.  বহু হাদিসে রসূলুল্লাহ (সঃ) এর ১১টি বিবাহের কথা এবং মহর দেওয়া ছাড়া বিবাহ করার কথা এসেছে। তো এগুলো হাদিস বটে কিন্তু উম্মতের জন্য অনুসরনীয় নয় ।( সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ ১১/ ১৪৩-২১৭)

হাদীসে এমন অনেক আমলের কথা বর্ণিত আছে যা রসূলুল্লাহ (সঃ) কখনো কোন বিশেষ প্রয়োজনে করেছেন । যেমনঃ 
৬.  কোমরে ব্যথা থাকার কারনে কিংবা এস্তেন্জা করার স্থানে বসার দ্বারা শরীরে বা কাপড়ে নাপাকি লাগার অশংঙ্কায় তিনি সারা জীবনে মাত্র ২বার দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন। কিন্তু হাদিসের বর্ণনায় এসব কারনের কথা উল্লেখ নেই । শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে পেশাব করার কথা আলোচিত হয়েছে। তো এই হাদিসের উপর আমল করে কি দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে সুন্নাহ বলা যাবে ??? অনুরুপভাবে রসূলুল্লাহ (সঃ) ইহরাম অবস্থায় এবং রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। ( সহীহ্ বুখারী, হা.নং- ১৯৩৮)
তাই বলে কি ইহরাম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানোকে সুন্নাহ বলা যাবে ???
কাজটি বৈধ একথা বুঝানোর জন্যও রসূলুল্লাহ (সঃ) অনেক কাজ করেছেন। যেমনঃ
৭. তিনি একবার তার নাতনী উমামা বিনতে যয়নবকে কোলে নিয়ে নামায পড়িয়েছেন।( সহীহ্ বুখারী,হা. নং- ৫১৬)
৮. আবার তিনি রোযা অবস্থায় তার এক স্ত্রীকে চুম্বন করেছেন । ( সহীহ্ বুখারী ,হা.নং- ১৯২৮) ।
এই উভয় ঘটনাই হাদিসে এসেছে । এর দ্বারা রসূলুল্লাহ (সঃ) বুঝাতে চেয়েছেন যে, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শিশ্ত কোলে নিয়ে নামায পড়া বা পড়ানো যেতে পারে এবং রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা বৈধ, এতে রোযার কোন ক্ষতি হবে না । তাই বলে কি সব সময় শিশু কোলে নিয়ে নামায পড়ানোকে কিংবা রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা সুন্নাহ বলা যাবে ???
উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, ” আহলে হাদীস ” নামটিই সঠিক নয় । কারন রসূলুল্লাহ (সঃ) কোন বর্ননায়ই উম্মতকে হাদীস মানতে বলেন নাই , বলেছেন ” সুন্নাহ ” মানতে । তারপরও যারা নিজেদেরকে ” আহলে হাদীস ” বলে দ্বাবী করে তাদের উচিৎ ১১টি বিবাহ করা, মহর ছাড়া বিবাহ করা, ইহরাম ও রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা, দাঁড়িয়ে পেশাব করা ইত্যাদিকে সুন্নাত মনে করে আমল করা ।
অনুরুপভাবে জীবনে মাত্র ৩দিন মসজিদে এসে তারাবীহ এর নামায পড়া , নামাযরত অবস্থায় কথা বলা , সালাম দেওয়া , সালামের উত্তর দেওয়া । কারন এগুলোও তো হাদিসে এসেছে । কিন্তু তারা এসব করবে না । তাহলে হাদীস মানার দাবীদার হয়ে এসব হাদিসের উপর আমল না করে কিভাবে তারা আহলে হাদীস হল ??? আসল কথা হলো, তারা নিজেদেরকে “আহলে হাদীস ” বললেও বাস্তবে মুখবাজি( বাগাড়ম্বরি ) ছাড়া কিছুই না ।
অপর দিকে রসূলুল্লাহ (সঃ) যেহেতু উম্মতকে সুন্নাহ আঁকড়ে ধরতে বলেছেন তাই সকল মাযহাব অনুসারীগন হাদিসের শুধুমাত্র সুন্নাহ অংশের অনুসরন করি এবং নিজেদেরকে ” আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহ ” বলে পরিচয় দিই । অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সঃ) এর সুন্নাত মানি এবং সাহাবায়ে কেরামের জামা’আতকে অনুসরন করি ।
মূলকথা “আহলে হাদীস ” নামটিই সঠিক নয় , এটি একটি বিভ্রান্ত নাম । হাদীসে রসূলুল্লাহ ( সঃ) এ নামে নাজাতপ্রাপ্ত সঠিক দলটিরও নামকরন করেন নি । আল্লাহ তা’আলা এই বিভ্রান্ত সম্প্রদায় থেকে আমাদের সবাইকেই হিফাজাত করুন এবং তাদের হেদায়েত দান করুন ।
সংরক্ষণ করা হয়েছে – মুহাম্মাদ মীর মোশারফ হুসাইন এর লেখা থেকে।